মনুষ্য উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

27 July, 2021

মনুষ্য উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে ?

সৃষ্টি ও মানুষের উৎপত্তি বৈজ্ঞানিক জগতের জন্য কৌতূহলের বিষয়। চার্লস ডারউইনের বিকাশবাদের পরিকল্পনার পর থেকেই তার সমর্থক তথা বিরোধী দুই পক্ষরই বিতর্ক চলছে । বিকাশবাদীদের স্বীকৃতি হলো অ্যামিবা থেকে মানুষ্য পর্যন্তের শৃঙ্খলাকে ক্রমিক বিকাশের দান তারা মনে করে, যার মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে পরিস্থিতি অনুকূল কিছু পরিবর্তন হয়ে তা থেকেই নতুন নতুন প্রজাতিগুলো হয়েছিল । এই প্রকার এই বিচারধারা অনুসারে মানুষ্য ও অন্য পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ, সকলের পূর্বপুরুষ একই ছিল তথা আধুনিক বানর হলো মানুষের সর্বাধিক নিকটতম সম্বন্ধী । বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে নানান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিকাশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবশ্যকতার অনুরূপ হচ্ছিলো অর্থাৎ এক প্রাণী অন্য এক প্রাণীতে কোনো বিকৃতির কারণে বদলাচ্ছিলো । এই বিকাশবাদের বিরুদ্ধে অনেক বিদেশী বৈজ্ঞানিক সময়ে - সময়ে অনেক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। শারীরিক বিকাশ, বৌদ্ধিক বিকাশ এবং ভাষার বিকাশ এই তিন বিষয়ের ওপরেও বিকাশবাদের বিরোধী বিদেশী বৈজ্ঞানিকেরাও অনেক গম্ভীর প্রশ্ন তুলে ধরেছেন, কিন্তু বিকাশবাদীরা কখনও এই প্রশ্নগুলোর সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারে না । এদিকে ভারতে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ও অনুযায়ী অনেক বিদ্বানেরা বিকাশবাদের এই সিদ্ধান্তকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছেন, তা সত্বেও ডারউইনের বিকাশবাদ আজও কিছু পূর্বাগ্রহী বৈজ্ঞানিকের কাছে আদর্শ সিদ্ধান্ত হয়ে আছে ।

মনুষ্য উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে ?

এই কিছু দিন পূর্বে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন রাজ্যমন্ত্রী শ্রীমান ডা০ সত্যপাল সিংহ জী বক্তব্য করেছিলেন যে আমরা সকল মানুষেরা বানরের নই বরং মানুষেরই সন্তান, কিন্তু এই মহানুভাবেরা কোলাহল করতে করতে ওনার ওপর চতুর্দিক থেকে আক্রমণ করতে থাকে । দেশের বৈজ্ঞানিক আর বৈজ্ঞানিক সংস্থাও একজোট হয়ে যায় । আমিও এই সকলের কাছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক প্রশ্ন করেছিলাম কিন্তু কোনো প্রমাণিত সংস্থা বা বিদ্বান আমার প্রশ্নের উত্তর দেন নি বরং কিছু মহানুভাবেরা অহেতুক প্রলাপই করেছেন । এই মহানুভাবেরা কোনো দেশী অথবা বিদেশী অথবা বিচারকের কোনো বক্তব্যই হোক না কেনো, কখনোই স্বীকার করবে না যে আমরা মানুষের সন্তান ?
আমার প্রশ্নের উত্তরে কেবল আমার সিদ্ধান্ত জানার ইচ্ছা প্রকাশকারী মহানুভাবেদের জন্য আমি বৈদিক বিকাশবাদের ওপর আমার সংক্ষিপ্ত বিচার প্রস্তুত করছি -
বস্তুত: “বিকাশবাদ’’ শব্দটির ওপর বিচার করুন, তো শব্দটি উত্তম এবং সার্থক, কিন্তু ডারউইন ও তার সমর্থকেরা এই শব্দটির সঠিক অর্থ জানে না আর নিজের অবৈজ্ঞানিক মতকে “বিকাশবাদ’’ বিশেষণে বিভূষিত করতে প্রয়াসই করেছে । যদি আমরা সম্পূর্ণ সৃষ্টির ওপর গম্ভীরভাবে বিচার করি, তো স্পষ্ট দেখা যায় যে সম্পূর্ণ সৃষ্টি এবং তার প্রত্যেক উৎপন্ন পদার্থ বিকাশের সিঁড়ি চড়তে - চড়তেই বর্তমান স্বরূপে আজ দেখা যাচ্ছে । বিনা ক্রমিক বিকাশে প্রাণী জগতের কি বলবো, কোনো লোক লোকান্তর কিংবা এক কণা, ফোটন আদিও নির্মাণ হবে না । বৈদিক বিজ্ঞান বিকাশবাদের খুব ব্যাখ্যা করে কিন্তু আমাদের বিকাশবাদ কখনোই ডারউইনের বিকাশবাদ নয় । ডারউইনের বিকাশবাদ বস্তুত: বিকাশবাদ নয়, বরং তা হলো অনিয়ন্ত্রিত ও বুদ্ধিবিহীন যদৃচ্ছায়াবাদ (মনগড়া), যাকে ভদ্রবশ বৈজ্ঞানিক বিকাশবাদ নামে আখ্যা দিচ্ছে ।
বাস্তবে বিকাশের অর্থ হলো, ‘‘বীজ থেকে অঙ্কুর, অঙ্কুর থেকে বৃক্ষ আর তা থেকে পুষ্প, ফল এবং পুনঃ বীজ উৎপন্ন হওয়া ।’’ আজ বিজ্ঞান যাকে মূল কণা মানছে, তা সেই কোয়ার্ক তথা ফোটনসও মূল পদার্থ নয় । ওটা হলো সূক্ষ্ম ঘনীভূত রূপ অর্থাৎ ওই রশ্মিগুলোর নানান সমুদায়ের বিকশিত রূপ । যে String theorist এই কণাগুলোকে সূক্ষ্ম String দ্বারা তৈরী মনে করে, ওই String -ও মূল তত্ব নয়, বরং তা হলো বৈদিক রশ্মিগুলোর ঘনীভূত ও বিকশিত রূপ । String ও কণা বা ফোটনস-এর সম্বন্ধে বর্তমান বিজ্ঞান অনভিজ্ঞ । জীববিজ্ঞানী যে অ্যামিবাকে সবথেকে ছোট ইউনিট মনে করে, অথবা তার ভিতর বিদ্যমান গুণসূত্র, জীন্স, D.N.A. আদিকে সূক্ষ্মতম পদার্থ বলে মনে করে, তারা জানে না যে ‘‘যেখানে তাদের জীববিজ্ঞান সমাপ্ত হয়ে যায়, সেখানে ভৌতিক বিজ্ঞান শুরু হয় আর যেখানে ভৌতিক বিজ্ঞান সমাপ্ত হয়ে যায়, সেখানে বৈদিক ভৌতিক বিজ্ঞান শুরু হয় আর যেখানে বৈদিক ভৌতিক বিজ্ঞানের সীমা সমাপ্ত হয়ে যায়, সেখানে বৈদিক আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান শুরু হয় ।’’ আজ সমস্যা এটাই যে বৈদিক ভৌতিক বিজ্ঞান এবং বৈদিক আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানের নিতান্ত অবহেলা করে বা তার উপহাস বা বিরোধ করে ভৌতিক বিজ্ঞান এবং জীব বিজ্ঞানী ইত্যাদির সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা চলছে । এটাও এক দুঃখজনক সত্য যে, সংসারকে বৈদিক ভৌতিক বিজ্ঞান সম্বন্ধে বোঝানোর ব্যাক্তি এখন কোথায় ? এই কারণে বর্তমান বিজ্ঞান অনেক সমস্যায় গ্রস্থ হয়ে আছে । তথা এক সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে, তো অনেক নতুন সমস্যাও উৎপন্ন করে ফেলে । এক টেকনোলজির আবিষ্কার করে, তো নানান দুষ্প্রভাবকেও করে ফেলে, ঔষধের বিকাশের সাথে সাথে রোগেও নিরন্তর বিকাশ হচ্ছে, সুখ -বিলাসিতা বিকাশের সাথে সাথে অপরাধ এবং প্রকৃতি প্রদূষণকেও সমৃদ্ধি করে চলেছে । এই সব সমস্যার মূল কারণ হলো, বর্তমান বিজ্ঞানের অপূর্ণ জ্ঞান, যার কারণ হলো বৈদিক বিজ্ঞানকে উপেক্ষা করা । অস্তু ।
আমরা কথা বলছিলাম যে সৃষ্টির প্রত্যেক কথিত মূলকণা ও ফোটন সূক্ষ্ম বৈদিক রশ্মিগুলোর অতি বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ সংযোগ দ্বারা তৈরী হয়েছে । সেই রশ্মিগুলো মনস্তত্ব এবং মহতত্ত্ব, কাল ও প্রকৃতির সংযোগ দ্বারা উৎপন্ন হয়েছে । সবার পিছনে সর্বনিয়ন্ত্রক, সর্বশক্তিমান, সর্বব্যাপক, নিরাকার, সর্বজ্ঞানী, চেতন কর্তা ঈশ্বরের প্রেরণা রয়েছে । সৃষ্টির সর্বাধিক সূক্ষ্মতত্ব প্রকৃতি থেকে বর্তমান মূলকণাগুলো পর্যন্ত বিকাশের এই পথ অনেক লম্বা ও এতে ব্যবস্থিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া রয়েছে, যাকে নিয়ে বর্তমান ভৌতিক বৈজ্ঞানিকের বিশেষ বোধ নেই । মূলকণা এবং ফোটনের উৎপত্তি থেকে নক্ষত্র, গ্রহ ও উপগ্রহ পর্যন্ত নির্মাণের বিকাশের এই যাত্রার চর্চা এখানে করা উচিৎ হবে না ।
তবে বর্তমান Cosmology, Particle Physics, Astrophysics, Quantum field theory, String theory এর মতো বিভিন্ন সংস্থাগুলো এই বিষয়গুলোকে নিয়ে নিজের সীমার ভিতর ব্যাখ্যা করে । আমার বিষয়ও এই বিষয়গুলোর গভীরে আলোকপাত করা । জীব বিজ্ঞান আমার বিষয় নয়, তা সত্ত্বেও বর্তমান অন্ধকার কোলাহলের মাঝে কিছু যুবকের অনুরোধে আমি আমার কথা ভৌতিক বিজ্ঞানের গভীরতা ছেড়ে বনস্পতি ও প্রাণী জগতের উৎপত্তির উপরই কেন্দ্রিত করছি । যখন পৃথিবীর মতো কোনো গ্রহ নক্ষত্র থেকে পৃথক হয়, কিংবা নক্ষত্র ওই গ্রহগুলো থেকে দূরে সরে যায়, ওই সময় গ্রহের স্বরূপ আগ্নেয় হয় । ধীরে ধীরে সেই আগ্নেয় রূপ ঠান্ডা হয়ে দ্রবীয় রূপে পরিণত হতে থাকে আর সেই সময় উৎপন্ন জলীয় বাষ্প ক্রমে ক্রমে ঠান্ডা হয়ে বৃষ্টি হওয়াতে পৃথিবী জলমগ্ন হতে থাকে । যে ভাগ উচ্চতার কারণে জলের বাইরে থাকে সেখানে জীবনের উৎপত্তি হেতু প্রয়োজনীয় তত্ত্ব অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, D.N.A., R.N.A., Fat, অ্যামিনো অম্ল, প্রোটিন, জল আদি বিভিন্ন রাসায়নিক অভিক্রিয়াগুলো নিরন্তর চলার কারণে উৎপন্ন হওয়া শুরু করে । এই উৎপত্তিতে সহস্র বছর লেগে যায় । এসব পদার্থ এই পৃথিবীর উপর এখানে ওখানে দ্রব্য ও গ্যাস রূপে ভরে যায় । সদ্য উৎপন্ন সাগরগুলোতেও এই পদার্থ উৎপন্ন হওয়া শুরু করে । এর পুনঃ অগ্রিম বিকশিত ও সংযুক্ত রূপে এক কোষীয় বনস্পতির উৎপত্তি হয় । বিভিন্ন পরমাণু (Atoms) ও ছোট অণু (Molecules) এর বিশিষ্ট ও বুদ্ধিপূর্ণ সংযোগ দ্বারা বনস্পতি (উদ্ভিদ) কোষের উৎপত্তি হলো অতি রহস্যময়ী ও ব্যবস্থিত প্রক্রিয়া । এটা সবসময় মনে রাখতে হবে যে সূক্ষ্ম রশ্মিগুলো থেকে বনস্পতি কোষের নির্মাণের সহস্র ধাপের সঞ্চালন কোনো মনগড়া প্রক্রিয়া দ্বারা সম্ভব নয় আর না এসব নিষ্প্রয়োজন ও অনিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া, বরং এটা হলো ঈশ্বর তত্ত্ব দ্বারা বুদ্ধিপূর্বক প্রেরিত, নিয়ন্ত্রিত ও এক বিশিষ্ট প্রয়োজনযুক্ত প্রক্রিয়া । এক এক কোষের সঞ্চালনকে ভালো করে দেখুন, তো দেখবেন যে এতে কয়েক আরব সূক্ষ্ম কণার এক বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিক সংযোগ আছে আর তার মধ্যে প্রত্যেক কণা শত শত সূক্ষ্ম বৈদিক রশ্মিগুলোর বিশিষ্ট সংযুক্ত বা বিকশিত রূপ রয়েছে । এর জন্য সর্বত্র চেতন শক্তির অনিবার্য ভূমিকা আছে । যাকে ছাড়া এই প্রক্রিয়া এক পাও এগোবে না । এটাও ধ্যানে রাখতে হবে যে জল, বায়ু, ভূমি এবং তার মধ্যে বা তার দ্বারা নানান জীবনীয় তত্ব তৈরির পর সর্বপ্রথম বনস্পতিরই উৎপত্তি হয় । বনস্পতি কোষের উৎপন্ন হওয়া, তার জীবিত থাকা এবং তার বিকশিত হয়ে গাছপালার উৎপন্ন হওয়ার জন্য আবশ্যক তত্বের উৎপত্তি পূর্বেই হয়ে থাকে, তারই পশ্চাৎ বনস্পতি কোষের জন্ম রাসায়নিক প্রক্রিয়া দ্বারা হয় । প্রাণী কোষ বনস্পতি নির্মাণের পশ্চাৎই উৎপন্ন হয় । তার কারণ হলো যে সকল জীব-জন্তু বনস্পতির উপরই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ রূপে নির্ভরশীল । মাংসাহারী প্রাণী শাকাহারী প্রাণীগুলোর উপর নির্ভরশীল থাকে । এই কারণে বনস্পতি উৎপত্তির পশ্চাৎ জীব জন্তুদের উৎপত্তি এককোষীয় জীব থেকেই শুরু হয় । বনস্পতির মধ্যেও সহজ থেকে জটিল গঠনকারী বনস্পতির ক্রমিক উৎপত্তি হয় । ক্রমিক উৎপত্তির মানে এই নয় যে শৈবাল বিকশিত হয়ে বটবৃক্ষ হয়ে যায় অথবা পিপল, আম আর ববুল বাদামের রূপ নেয় । এই প্রকারে এককোষীয় জীব অ্যামিবার উৎপত্তি ভূমি বা জলে হয়, কিন্তু কোনো জীব যদিও বা সেটি এককোষীয় হোক না কেন অথবা বহুকোষীয়, কেবল কিছু পদার্থের রাসায়নিক সংযোগ মাত্রই হয় না বরং তার ভিতর সূক্ষ্ম চেতন তত্ব জীবাত্মারও সংযোগ হয়। সম্পূর্ণ সংযোগই হলো জীবের রূপ। বর্তমান বিজ্ঞানও রাসায়নিক সংযোগ দ্বারা কোষের উৎপত্তি স্বীকার করে-
A very important step the formation of a cell must have been the development of lipid membrane. In order that biological systems can function efficiently, it is essential that the enzymes connected with successive stages of synthesis of biochemical pathway should be in a close a proximity to one another. The necessary conditions for this are obtained in cells by means of lipid membranes which can maintain local high concentration of reactants. The presence of hydrocarbons early in the earth’s history has already been mentioned....
Life requires for its maintenance a continuous supply of energy this could have been provided by ultraviolet or visible light from the sun, or possibly partly from the breakdown of unstable free radiations produced in the earth’s atmosphere by ultraviolet light. [Cell Biology, page - 474 by E.J. Ambrose & Dorothy M. East, London -1973]
অর্থ হল যে এই পৃথিবীতে রাসায়নিক, জৈবিক ক্রিয়াগুলো দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের এনজাইমস এর নির্মাণ হয়ে জীবন হেতু আবশ্যক পদার্থের নির্মাণ হয়েছে । এর সাথেই নানাবিধ রাসায়নিক পদার্থ দ্বারাই কোষীকা ভিত্তিগুলোর তথা জীব দ্রব্যাদির নির্মাণ এই ভূমিতে হয়েছিল তথা কোষগুলোর নিরন্তর পোষণ দেওয়ার কাজ পৃথিবীতে উপস্থিত আবশ্যক রাসায়নিক পদার্থগুলো তথা সূর্যের প্রকাশ করেছে । কিছু বৈজ্ঞানিক এমন বিশ্বাস করেন যে পৃথিবীতে জীবন অন্য কোনো গ্রহ থেকে এসেছে, ওনার কাছে আমরা জানতে চাই যে, যেই ভাবে কোনো অন্য গ্রহতে জীবনের উৎপত্তি হতে পারে, তো ওরকম ভাবে এই পৃথিবীতে কেন হতে পারবে না ?
বস্তুতঃ এই ধরনের বিচার সর্বথা অপরিপক্ক চিন্তার পরিনাম । বর্তমান কিছু বৈজ্ঞানিকেরাও এই ধারণার সঙ্গে একমত নয় ।
তারা বলেন -
The view the life did in fact originate on the earth itself after it had cooled over a period of many thousands of years is almost universally accepted today. [Cell Biology, page - 474]

যে বৈজ্ঞানিক অ্যামিবা থেকে বিকশিত হয়ে অর্থাৎ এক প্রজাতি থেকে দ্বিতীয় প্রজাতির উৎপন্ন হওয়ার কথা বলে, তারা এটা বিচার করে না যে উদ্ভিদ বা প্রাণীর মধ্যে এ ধরনের পরিবর্তন সম্ভব নয় আর না এর কোন প্রয়োজন আছে । আমরা এখানে বৈজ্ঞানিকদের কল্পিত ও মিথ্যা বিকাশবাদের উপর কোনো প্রশ্ন এই কারণে করবো না, কারণ আমরা এর আগেও অনেক প্রশ্ন তার উপর করেছি। যারা ডারউইনের বিকাশবাদের বিস্তারিত পর্যালোচনা জানতে চায়, তাদের আর্য বিদ্বান পণ্ডিত রঘুনন্দন শর্মা দ্বারা লিখিত বৈদিক সম্পত্তি নামক গ্রন্থ পড়া উচিত । প্রশ্ন করছি, যখন রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে অ্যামিবা উৎপন্ন হতে পারে, তখন বিভিন্ন প্রাণীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর উৎপত্তি কেন হতে পারবে না ?
যখন ৫০০ এরও অধিক গুণসূত্রকারী অ্যামিবা রাসায়নিক অভিক্রিয়া দ্বারা উৎপন্ন হতে পারে, তখন বানর, শিম্পাঞ্জি, অরাঙ্গুটান যার গুণসূত্র হলো ৪৮-৪৮, আবার ৪৬ গুণসূত্রকারী মানবের মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষের ২৩-২৩ গুণসূত্রকারী শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর উৎপত্তি অ্যামিবার মতো কেন হতে পারবে না ?
মানুষের সমান গুণসূত্রকারী Sable Antelope এর মতো হরিণের মতো পশু তথা Reaves’s Muntjac নামক হরিণের মতো পশুর শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর, ৫৬ গুণসূত্রকারী হাতির শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর উৎপত্তি কেন হতে পারবে না ? পিঁপড়া, যার গুণসূত্র হলো কেবল ২, তারা কেন উৎপন্ন হতে পারবে না ?
এখানে বৈদিক মত এই যে, যে সকল জীবের ভরণ-পোষণ হেতু যত কম পদার্থের আবশ্যকতা হয়, সেই জীব ততই আগে উৎপন্ন হয় । সকল প্রাণীর মধ্যে বনস্পতির উৎপন্ন আগে হয় আর মাংসাহারী প্রাণীদের পূর্বে শাকাহারী প্রাণীদের তথা শাকাহারীদের মধ্যে মানুষ্য এক এমন প্রাণী, যাকে সব থেকে বিকশিত বা উন্নত মানা যেতে পারে এবং তারা বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল থাকে, এই কারণে তাদের উৎপত্তি সবার শেষে হয়েছে ।

এখন প্রশ্ন এটা উঠছে যে, মাতা বিহীন ভ্রূণের বিকাশ কি করে হয় ? শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর তো ধরে নিন রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলস্বরূপ ভূমি বা জলে হয়ে গেছে কিন্তু শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণ ও ভ্রূণের বিকাশ কোথায় আর কি ভাবে হয়েছে ? এই বিষয়ে মনুষ্য উৎপত্তির চর্চায় মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীজী তার সত্যার্থ প্রকাশ নামক গ্রন্থে যুবাবস্থাতে ভূমিতে উৎপত্তি বলেছেন । তিনি তর্ক দিয়েছেন যে, যদি শিশু অবস্থাতে উৎপত্তি হতো তবে, তার রক্ষা আর পালন কে করতো তথা যদি বৃদ্ধ উৎপন্ন হতো, তবে বংশপরম্পরা কি ভাবে চলতো ? এই কারণে মানুষের যুবাবস্থাতেই ভূমিতে উৎপত্তি হয়েছে । যদিও এই বিষয়ে তিনি কোনো প্রমাণ দেন নি কিন্তু আমরা ঋগ্বেদের প্রমাণ এই বিষয়ে পাই, যেখানে লেখা আছে -
উপ সর্প মাতরং ভুমিমেতামুরুব্যচসং পৃথিবীং সুশেবাম্ ।
ঊর্ণম্রদা য়ুবতির্দক্ষিণাবত এষা ত্বা পাতু নির্ঋতেরুপস্থাত্ ।। ঋ০ মন্ডল ১০ সূক্ত ১৮ মন্ত্র ১০

ইহার উপর আমার [আচার্য অগ্নিব্রত নৈষ্টিক] আধিভৌতিক ভাষ্যঃ
হে জীব! (সুশেবাম্) {সুশেবঃ সুসুখতমঃ-নিরু০ ৩/৩} উত্তম সুখ প্রদানে সর্বোত্তম (এতাম্) এই (মাতরম্) মাতার সমান (ভূমিম্) প্রারম্ভে যাহার গর্ভে সকল প্রাণী উৎপন্ন হয়ে বা যাহার উপর সব প্রাণী নিবাস করে, সেই পৃথিবী (উরু-ব্যচসম্) অতি বিস্তারবান হয়ে সকল ভ্রূণকে (উপ সর্প) নিকটতা থেকে প্রাপ্ত হয়, ইহার সাথেই ওই গর্ভের আন্তরিক আবরণ নিরন্তর হালকা স্পন্দন করতে থাকে (ঊর্ণম্রদা) {ঊর্ণম্রদা ইত্যুর্ণমৃদ্বীত্যেবৈতদাহ -কাশ০ ৪/২/১/১০; সাধ্বী দেবেভ্য ইত্যেবৈতদাহ য়দাহোর্ণম্রদসং ত্বেতি -শ০ ১/৩/১/১০} সেই ভূমি ঐ ভ্রূণকে এইরূপ আচ্ছাদন প্রদান করে, যাহা পশমের সমান কোমল, মসৃণ বা আরামদায়ক । তাহা ওই দিব্য ভ্রূণকে সবদিক থেকে গর্ভকে সমান সুখদায়ক স্পর্শযুক্ত ঘর প্রদান করে । (য়ুবতীঃ) ওই গর্ভরূপ পৃথিবীতে নানান জীবনীয় রসের মিশ্রণ -অমিশ্রণের ক্রিয়া নিরন্তর চলতে থাকে (দক্ষিণাবতঃ) সেই পৃথিবী ঐ ভ্রূণকে তখন পর্যন্ত পোষণ প্রদান করতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত তাহারা নিজের পালন ও রক্ষণ করতে পূর্ণ দক্ষ অর্থাৎ সক্ষম না হয়ে যায় (এষা) এই ভূমি (ত্বা) তুমি জীবকে (নির্ঋতেঃ-উপস্থাত্) {নির্ঋতির্নিরমণাত্ ঋচ্ছতেঃ কৃচ্ছ্রাপত্তিরিতরা -নিরু০ ২/৮} পূর্ণ রূপে নিরন্তর সানন্দ রমণ করে, এইরূপ সুরক্ষিত ও উত্তম স্থানে (পাতু) ঐ ভ্রূণ বা জীবের পালন করে । ইহার সাথেই যেখানে ক্লেশ পৌছাতে পারে, এই প্রকার অসুরক্ষিত স্থান থেকে ওই ভূমির গর্ভরূপ আবরণ ওই জীব বা ভ্রূণকে রক্ষা করে ।
উচ্ছ্বঞ্চস্ব পৃথিবী মা নি বাধথাঃ সূপায়নাস্মৈ ভব সূপবঞ্চনা ।
মাতা পুত্রং য়থা সিচাম্যেনং ভূম ঊণুর্হি ।। ১১।। ঋ০ মন্ডল ১০ সূক্ত ১৮ মন্ত্র ১১

আমার আধিভৌতিক ভাষ্যঃ (পৃথিবী) সেই গর্ভরূপ পূর্বোক্ত পৃথিবী (উচ্ছ্বঞ্চস্ব) উৎকৃষ্টরূপে উর্দ্ধ দিশাতে স্পন্দিত হয়ে কিংবা উথলের মতো হয় । (মা বাধথাঃ) ওই ভূমির আবরণ এমন হয়, যে তাহার ভিতর বাস করা ভ্রূণ বা জীবের প্রাপ্ত হয়ে থাকা জীবনীয় রসকে থামায় না অর্থাৎ সেই রস চুয়াতে-চুয়াতে ওই জীবকে প্রাপ্ত হতে থাকে । (অস্মৈ) তাহা এই জীবনের জন্য (সূপায়না-ভব) সেই ভূমি তাহাকে পোষক ও সংবর্ধক জীবনীয় তত্বের উপহার প্রদান করে (সূপবঞ্চনা) {উপবঞ্চনম্=দুবকনা} সেই ভূমি আবরণ ঐ ভ্রূণের বা জীবদের ভালো ভাবে ঢেকে আশ্রয় প্রদান করে (মাতা য়থা) যে প্রকার মাতা নিজের সন্তানকে কোল বা গর্ভে ঢেকে সুরক্ষা প্রদান করে, ওই প্রকার (নি-সিচা ভূমেঃ) {নি+সিচ্=উপরে ফেলে দেওয়া, গর্ভযুক্ত করা -আষ্টে} ভূমির সেই ভাগ ঐ জীবদের নিজের গর্ভে নিয়ে তাহার উপর নানা আবরণের দ্বারা (এনং) ঐ জীবদেরকে (অভি ঊর্ণুহি) সবদিক থেকে আচ্ছাদিত করে নেয় ।
উচ্ছ্বঞ্চমানা পৃথিবী সু তিষ্ঠতু সহস্রং মিত উপ হি শ্রয়ন্তাম্ ।
তে গৃহাসো ঘৃতশ্চুতো ভবন্তু বিশ্বাহাস্মৈ শরণাঃ সন্ত্বত্র ।। ঋ০ মন্ডল ১০ সূক্ত ১৮ মন্ত্র ১২

আমার আধিভৌতিক ভাষ্যঃ (উচ্ছ্বঞ্চমানা) পূর্বোক্ত উথল এবং মৃদু স্পন্দন করে নরম (পৃথিবী) ভূমি (সু তিষ্ঠতু) ঐ ভ্রূণের বা জীবের আচ্ছাদিকা হয়ে সুদৃঢ়তা দ্বারা সুরক্ষাপূর্বক স্থিত হয়ে ঐ জীবেরও স্থিরতা প্রদান করে (সহস্রম্ মিতঃ) ওই ভূমির পৃথক-পৃথক স্থানে অনেক সংখ্যায় (উপ হি শ্রয়ন্তাম্) জীব নিকটস্থ থেকে আশ্রয় পায় কিংবা ঐ গর্ভরূপ স্থানের মধ্যে বড় সংখ্যাতে {মিতঃ=মিনোতিগতিকর্মা - নিরু০ ২/১৪} বিভিন্ন সূক্ষ্ম অণুর প্রবাহ হয়ে থাকে (তে গৃহাসঃ) ভূমির সেই স্থান ঐ জীবের জন্য ঘরের সমান হয় {গৃহাম্=গৃহাঃ কস্মাদ্ গৃহণাতীতি সতাম্-নিরু০ ৩/১৩} আর ঘরের সমান সেই ভূকোষ্ঠ ঐ জীবের ঐরূপই ধরে বা ধারণ করে থাকে, যেমন মাতা তাহার সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে রাখে (ধৃতশ্চুতো ভবন্তু) সেই ভূকোষ্ঠ ঐরূপ হয় যে ইহার মধ্যে ঘী-এর সমান মসৃণ রস সর্বদা চুয়াতে থাকে (অস্মৈ) তাহা ঐ জীবের জন্য (বিশ্বাহা) {বিশ্বাহা=সর্বাণি দিনানি -ম০ দ০ য০ ভা০ ৭/১০} সর্বদা অর্থাৎ পূর্ণ যুবাবস্থা পর্যন্ত (শরণাঃ সন্তু অত্র) এই অবস্থাতে সেই জীব ঐ কোষ্ঠের মধ্যে আশ্রয় পায় ।
এই মন্ত্রগুলোতে ভূমির ভিতর যুবাবস্থা পর্যন্ত কিভাবে মানুষ্য সহ সকল জরায়ুজ প্রাণী বিকশিত হয় তার সুন্দর চিত্রন করা হয়েছে ।
যে প্রকারে অ্যামিবা আদি এককোষীয় প্রাণীর কোষের নির্মাণ রাসায়নিক ও জৈবিক ক্রিয়ার দ্বারা হয়, ওই প্রকারে বহু কোষীয় জরায়ুজ তথা ডিম্বজেরও শুক্র তথা রজের নির্মাণ এই উথলানো কোমল তথা সকল আবশ্যক পদার্থ, মাতার গর্ভে যেসবই থাকে, দ্বারা পরিপূর্ণ পৃথিবীর পৃষ্ঠ স্তরের মধ্যে হয়ে যায় । এখন আসুন বিবেচনা করা যাক কেন ভ্রূণের পুষ্টির জন্য মায়ের গর্ভের প্রয়োজন । এই কারণে, যাতে ভ্রূণ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে পারে, ভ্রূণকে নিরাপদ নরম, মসৃণ আবরণ তথা প্রয়োজনীয় উষ্ণতা যেন পায় । যদি এই পরিস্থিতিগুলোকে মাতৃগর্ভের বাইরে অন্যত্র কোথাও এই অবস্থার উৎপন্ন করা হয়, তো ভ্রূণের বিকাশ ওখানেই হয়ে যাবে, যেভাবে আজ পারখনালী (Test Tube) থেকে শিশুর জন্ম করা হয়েছে ।

একটা জিনিস গুরুত্বপূর্ণ যে, ঐ সময় মনুষ্য বা যেকোনো জরায়ুজ যুবাবস্থাতে ভূমি থেকে উদ্ভিজের মতো উৎপন্ন হয়েছে । ভগবদ্ দয়ানন্দজী মহারাজের এই কথন সর্বথা উচিত যে, যদি শিশু উৎপন্ন হয়, তো পালন কে করবে আর যদি বৃদ্ধ উৎপন্ন হয়, তবে তার বংশ কিভাবে চলবে? (দেখুন - সত্যার্থ প্রকাশ, অষ্টম সমুল্লাস)
শতপথ ব্রাহ্মরণেও এর উল্লেখ রয়েছে-
মনুষ্যা ঋষয়শ্চ য়ে, ততো মনুষ্যা অজায়ন্ত (শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/৩/২/৫)
অনুবাদঃ আদিতে অনেক অর্থাৎ শত শত, সহস্র মনুষ্য উৎপন্ন হয়েছিল।
উপনিষদকার ঋষি একে আরো বিস্তার দিয়েছেন -
তস্মাচ্চ দেবা বহুদা সংপ্রসূতাঃ সাধ্যা মনুষ্যাঃ........ ।।৭।। মুণ্ডক উপ০ ২/১/৭
অর্থাৎ- ওই পরমাত্মা হতে অনেক বিদ্বান সিদ্ধি প্রাপ্ত জন তথা সাধারণ বিদ্বান জন উৎপন্ন হয়েছে।
ঈশ্বর অসংখ্য মনুষ্য সৃষ্টির আদিতে যুবাবস্থায় উৎপন্ন করেন-
উপো রুরুচে য়ুবতির্ন য়োষা বিশ্ব জীবং প্রসুবংতি চরায়ৈ ।
অভূদগ্নিঃ সমিধে মানুষাণামরুজ্যের্তিবাধমনা সমাংসি ।। ঋগ্বেদ-৭/৭৭/১
পদার্থ- (তমাংসি) অজ্ঞানরূপ তমকে (বাধমানা) নাশ করিয়ে (অগ্নিঃজ্যোতিঃ) প্রকাশ-স্বরূপ জ্যোতি (মানুষাণাং, সমিধে,অকঃ) মনুষ্যের সম্বন্ধে প্রকট হয়ে যিনিই (প্রসুবংতি) প্রসূতাবস্থাতে (বিশ্ব, চরায়ৈ, জীবং) বিশ্বের চরাচর জীবকে (অভূত্) প্রকট করে, সে জ্যোতি (উপো) এই সংসারে (য়ুবতিঃ) যুবাবস্থাকারী (রুরুচে) প্রকাশিত হয়, (ন য়োদা) স্ত্রীর মতো নয় ।
ভাবার্থ- এই মন্ত্রে পরমাত্মার জ্যোতিস্বরূপকে বর্ণন করা হয়েছে অর্থাৎ জগৎজননী জ্যোতিরূপ পরমাত্মা, যিনি জীবমাত্রের জন্মদাতা, উনিই সৃষ্টির আদিতে সারা বিশ্বের চরাচর জীবদের যুবাবস্থাতে প্রকট করেন, আর সেই পরমাত্মারূপ শক্তিও প্রকট হয় যুবাবস্থায় সকল জীব প্রকট হয়, স্ত্রীর মতো নয় ।
ঈশ্বরই আদিতে পৃথিবীর সব থেকে উচুতম স্থান (তিব্বতে) মনুষ্য সৃষ্টি করেছিল -
উত্তে স্তভ্নামি পৃথিবীং ত্বত্পরীমং লোগং নিদধন্মোঅহং রিষম্ ।
এতাং স্হূর্ণা পিতরো ধারয়ন্তু তেহত্রা য়মঃ সাদনা তে মিনোতু ।। ঋগ্বেদ ১০/১৮/১৩
পদার্থ - (পৃথিবীং তে-উত্ স্তভ্নামি) হে জীব! তোমার জন্য আমি ঈশ্বর, পৃথিবীকে জলমিশ্রিত ভূগোল থেকে উপরে টেনে (ইমং ত্বত্-লোগং পরিনিদধত্-ম-উ-অহং-রিষম্) সেখানে তোমার এই গর্ভকোষকে রেখেছি আমি না দুঃখ দান করি ( এতাং স্হূণাং পিতরঃ-ধারয়ন্তু) এই উত্থিত পৃথিবীতে সূর্য-কিরণ ধারণ করে (তত্র য়মঃ-তে সদনা মিনোতু) সূর্য তোমার জন্য প্রয়োজনীয় কোষকে প্রাপ্ত করায় ।
ভাবার্থ- ঈশ্বর আদিতে সৃষ্টি পৃথিবীর উচুতম স্থানে করেন । সেস্থান জলমিশ্রিত পৃথিবী থেকে পর্বতভূমি রূপে (তিব্বতের) উর্ধ দিকে টানে । সেই উঠে থাকা ওই ভূ-ভাগকে সূর্যের রশ্মি ধারণ করে আর সূর্য নিজের রশ্মি দ্বারা জীবাত্মার গর্ভদিগকে প্রাপ্ত করে, অতএব তাঁহার দ্বিতীয় নাম সবিতা ।
আর্য বিদ্বান আচার্য বৈদ্যনাথ জি শাস্ত্রি ‘‘বৈদিক যুগ এবং আদিমানব’’ এতে বোস্টন নগর (আমেরিকার) স্মিথ সিনিয়র ইনস্টিটিউটে জীববিজ্ঞানের বিভাগাধ্যাক্ষ ডাক্তার ক্লার্ককে উদ্ধৃত করেন-
‘‘Man appeared able to think walk and defend himself. অর্থাৎ মনুষ্য সৃষ্টির আদি কালে চিন্তন করতে, হাঁটতে এবং আত্মরক্ষা করতে সক্ষম উৎপন্ন হয়েছিল ।’’
এখানে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে যে, পৃথিবীরূপ গর্ভে ২৫ বর্ষ পর্যন্ত যুবক কি করে পালন আর বৃদ্ধি পায় ? তো এর উপর গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করুন, তো কোনো আপত্তি দেখা যায় না, কারণ যে প্রকারে আজ এক সন্তান, যে প্রায় ৯ মাস মাতার গর্ভে থাকে । প্রসবের পূর্বে না শ্বাস নেয়, না কাঁদে, না হাসে, না হাত পা ছোড়ে, না খায়, না পান করে, মলমূত্র আদিও বিসর্জন করে না, প্রসবের পরই তার এই সকল ক্রিয়া অতি দ্রুত শুরু হয়ে যায় । তখন এটা আশ্চর্য ব্যাপার নয় কি, আশ্চার্যজনক কি না ? যদি কোনো এক ব্যাক্তিকে এসব থেকে দূরে রাখা যায় আর এই প্রসব ক্রিয়া সম্বন্ধে একেবারে অজ্ঞানী থাকে, তখন সে এই প্রসব ক্রিয়াকে সম্ভব মানবেই না । যদি সে কেবল ডিম্বজেরই উৎপত্তি দেখে থাকে, তো সে জরায়ুজের প্রসব প্রক্রিয়াকে ডিম্বজের থেকে ভিন্ন মানতে চাইবে না । এই জন্য যুবাবস্থাতে প্রাণীদের উৎপত্তি অসম্ভব নয়, হ্যাঁ, অদ্ভুত অবশই । আবার অন্যদিকে এত সৃষ্টি প্রক্রিয়ার জটিলতা, ক্রমবদ্ধতা, বৈজ্ঞানিকতা অদ্ভুত নয় কি ? তাহলে যুবাবস্থাতে প্রাণীদের উৎপত্তি বিচিত্র থাকে কোথায় ?
এটাও জানা আবশ্যক যে, যেভাবে রাসায়নিক অভিক্রিয়াগুলো দ্বারা ভূমিরূপী মাতার ভিতর প্রাণীদের উৎপত্তি হয়ে সকল জরায়ুজ, ডিম্বজ তথা স্বেদজ একই প্রকারে ভুমির পৃষ্ঠ স্তর হতে উদ্ভিজের মতো যুবাবস্থাতে জন্ম নেয়, সেইভাবে রাসায়নিক অভিক্রিয়াগুলো দ্বারা বিভিন্ন বনস্পতির বীজ ভূমির স্তরে তৈরী হয়ে তথা আবশ্যক পোষক পদার্থ পৃথিবীতেই প্রাপ্ত হওয়ায় সর্বত্র গাছপালা, ঝোপঝাড় বনস্পতি বা বিশালকায় বৃক্ষ পূর্বেই উৎপন্ন হয়ে ছিল । যেভাবে কোনো প্রাণী উৎপন্ন হয়, তার ভোজন সে ততকাল ভূমিতে তৈরী পায় । মানুষ্যের অনেক নর নারী জোড়া যুবাবস্থায় ভূমিতে উৎপন্ন হয়, সেসময় তারা তাদের পৃথিবী ফল, ফুল, অন্ন আদিতে পরিপূর্ণ পায়, আর তারা ভূমি থেকে বেরিয়ে এসে ততকালই ফলাদি ওভাবেই খেতে শুরু করে, যেভাবে আজকের কোনো শিশু (মনুষ্য বা গৌ আদি পশুর) জন্ম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাতার দুগ্ধ পান করা শুরু করে দেয় । এতে কোনো সন্দেহ বা সংশয়ের অবকাশ নেই ।
ইহা আমি মনুষ্যের উৎপত্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখেছি । আমি খুব অবাক যে চার্লস ডারউইনের পশ্চাৎ ওনার পুত্র এবং সাথে অনেক ইউরোপিয়ান বৈজ্ঞানিকেরাও এই মিথ্যা বিকাশবাদের খণ্ডন করেছে কিন্তু পাশ্চাত্যের দাস হওয়া কথিত প্রবুদ্ধের মস্তিষ্কে এখনও চার্লস ডারউইনের ভূত বসে আছে ।
এখন আমি সংক্ষেপে পন্ডিত রঘুনন্দন শর্মা দ্বারা লিখিত পুস্তক ‘বৈদিক সম্পত্তি’ থেকে কিছু বৈজ্ঞানিকের বিচারগুলোকেও উদ্ধৃত করতে চাই -
স্যার অলিভার লজ লিখেছেন:
We are in the process of evolution; we have arrived in this planet by evolution. That is all right. What is evolution? Unfolding development-unfolding as a bud unfolds into a flower, as an acron into an oak. Everything is subject to a process of growth, of development, of unfolding.
অর্থাৎ আমরা বিকাশেরই প্রবন্ধাধিন । আমরা এই পৃথিবী গ্রহে পৌঁছেছি শুধুমাত্র বিকাশের মাধ্যমেই । এসব সত্য, কিন্তু বিকাশ কী ? বিকাশ হচ্ছে অবাধিত অগ্রগতি । অবাধিত অর্থাৎ কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার নিয়ম - বীজ থেকে গাছ হয়ে যাওয়ার উপায় । প্রত্যেক পদার্থ কুঁড়ি থেকে ফুলের মতো অবাধিত উন্নতিরই ফল । (Science and Religion, p.16.) (বৈদিক সম্পত্তি পৃষ্ঠ ১৫০)
There is manifest progress in the succession of being on the surface of the earth. This progress consists in an increasing similarity of the living fauna, and among the vertebrates especially, in their increasing resemblance to man ……. But this connection is not the consequence of a direct linkage between the fauna of different ages. There is nothing like parental descent connecting them. The fishes of the Paleozoic age are in no respect the ancestors of the reptiles of the secondary age, nor does man descend from the mammals which preceded him in the Tertiary age. The link by which they are connected is of a higher and immaterial nature and Himself, whose aim in forming the earth, in allowing it to undergo successively all the different types of animals which have passed away, was to introduce man upon the surface of our globe. Man is the end towards which all the animal-creation has tended from the first appearance of the Paleozoic fishes.
অর্থাৎ যারা পৃথিবীতে জন্মেছে, হাড়বিহীন প্রাণী এবং মনুষ্যের মতো অস্থিযুক্ত প্রাণীর ক্ষেত্রেও একই রকম অগ্রগতি দেখা যায়, কিন্তু এই সমতার মানে এই নয় যে এক ধরনের প্রাণী আরেক ধরনের প্রাণীতে বিকশিত রূপ হয়ে যায় । আদিমকালীন মৎস্য সর্পনশীল প্রাণীদের পূর্বজই নয়, আর না মনুষ্যই অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে বিকশিত হয়েছে । প্রাণীদের শৃঙ্খল কোনো অভৌতিক তত্ত্ব দ্বারা সম্বন্ধ রাখে । যাহা পৃথিবীতে বহু প্রকারের জীব সৃষ্টি করে শেষে মানুষের সৃষ্টি করেছে । - Principles of Zoology, Pg. 205-206 by Agassiz (বৈদিক সম্পত্তি পৃষ্ঠ ১৫০,১৫১)
How did living creatures begin to be upon the earth? In point of science, we do not know.
অর্থাৎ বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা জানি না কিভাবে পৃথিবীতে জীবের সৃষ্টি হয়েছে । -Introduction to Science, Pg. 142 by J.A. Thomson (বৈদিক সম্পত্তি পৃষ্ঠ ১৫২)
The question is: what was the manner of their being upon the previously tenantless Earth? Our answer must be that we do not know.
অর্থাৎ এই নির্জন পৃথিবীতে কিভাবে প্রাণীর উদ্ভব হল ? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি না । Evolution, Pg. 70 by Prof. Patrick Geddes (বৈদিক সম্পত্তি পৃষ্ঠ ১৫২)
১৯২২ সালের নভেম্বরের ছমু হম নামক পত্রে Jones Bowson বলেন যে, ‘‘ব্রিটিশ মিউজিয়াম' এর অধ্যক্ষ ড. এথ্রিজ বলেছেন যে, এই ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এমন একটি কণাও নেই, যা প্রমাণ করতে পারে প্রজাতির (Species) মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে । বিকাশ সম্পর্কে দশটির মধ্যে নয়টিই নিরর্থক এবং অসার । তাদের পরীক্ষার আধার সত্যতা আর নিরীক্ষণের উপর একেবারেই অবলম্বিত নয় । সারা সংসারে এমন কোনো বস্তুই নেই, যা বিকাশের সাহায্য করে ।’’ (বৈদিক সম্পত্তি পৃষ্ঠ ১৭০)
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় 'ক্রিশ্চিয়ান হেরাল্ড'-এ এই খবর প্রকাশিত হয় যে মেলবোর্নে (অস্ট্রেলিয়া) ব্রিটিশ সায়েন্স সোসাইটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । প্রফেসর উইলিয়াম ওয়াটসন এর সভাপতি ছিলেন । তিনি তার বক্তৃতায় বলেছিলেন যে ‘ডারউইনের বিকাশবাদ একেবারেই অসত্য এবং বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে।’ প্রো. প্রেট্রিক গেডিস বলেছেন যে, For it must be admitted that the factors of the evolution of man partake largely of the nature of the may-be’s which has no permanent position in Science. অর্থাৎ মানুষ আগের মতোই আছে তার প্রমাণ এই যুদ্ধ । -Ideals of Science and Faith.
(বৈদিক সম্পত্তি পৃষ্ঠ ২১২)
স্যার জে. ডব্লিউ ড্যাসন বলেছেন যে, ‘একটি বানর এবং একটি মনুষ্যের মধ্যে আকৃতি সম্পর্কে বিজ্ঞান কিছুই জানে না । মনুষ্যের প্রাচীনতম হাড়গুলিও বর্তমান মনুষ্যের মতোই । এতে ওই বিকাশের কোনো ঠিকানাই মেলে না, যা এই মানব দেহের আগে ছিলো’। (বৈদিক সম্পত্তি পৃষ্ঠ ১৭০)
সিডনি কোলেট বলেছেন যে, ‘বিজ্ঞান স্পষ্ট সাক্ষী যে মনুষ্য অধঃপতিত অবস্থা থেকে উন্নত অবস্থায় না গিয়ে উল্টো অধঃপতনের দিকে যাচ্ছে । মনুষ্যের আরম্ভিক অবস্থা উন্নত ছিল’।
(বৈদিক সম্পত্তি পৃষ্ঠ ১৭১)

আচার্য বৈদ্যনাথ জি শাস্ত্রি দ্বারা লিখিত বৈদিক যুগ এবং আদিমানব পুস্তক পৃষ্ঠ ১১ থেকে উদ্ধৃত-
Now a day unhappily Jelly fish produces nothing but Jelly fish. But had that gelatinous morsel been fated to live. say a million of centuries earlier it might have been the progenitor of the race from which Homer and Plato, David and Paul, Shakespear and our eminent professor have in their order been evolved. (Conder’s Natural Selection and Natural Theology)
If it could be shown that the thrush was hatched from the lizard. (Conder’s same book)
ফরাসি দার্শনিক Henri Bergson কে Anti Darwin theory দেওয়ার জন্য নোবেল পুরস্কার পান। তা সত্ত্বেও আমাদের প্রবুদ্ধরা কিছুই বুঝলেন না । নেট এ অনেক বিদেশী বৈজ্ঞানিকদের Neo Darwinism আদি ডারউইন বিরোধী চর্চা করতে পাঠকগণ দেখতে পাবেন । এদিকে ভারতীয় বৈজ্ঞানিকদের চর্চার প্রসঙ্গে আর্য বিদ্বান স্বামী বিদ্যানন্দ সরস্বতী দ্বারা রচিত সত্যার্থ ভাস্কর গ্রন্থ (পৃষ্ঠ ৮৭৭ কে উদ্ধৃত করা এখানে প্রাসঙ্গিক –
বনস্পতিশাস্ত্রের অন্তঃরাষ্ট্রীয় খ্যাতিপ্রাপ্ত বিদ্বান ডঃ বীরবল সাহনিকে জিজ্ঞেস করা হলো – ‘‘আপনি বলেন যে প্রারম্ভে একটি কোষের জীবিত প্রাণী ছিল তাদের থেকে উন্নতি করে, তারা বড়-বড় প্রাণীতে পরিণত হয়েছিল । আপনি আরও বলেন যে, প্রারম্ভে অনেক কম জ্ঞান ছিল তারপর ধীরে ধীরে উন্নতি করে জ্ঞান ওই অবস্থায় পৌছায়, যেখানে বিজ্ঞান আজ পৌঁছেছে । তবে আপনি এটা তো বলুন - Wherefrom did life come in the very beginning and wherefrom did knowledge come in the very beginning? অর্থাৎ প্রারম্ভে জীব কোথা থেকে এসেছে আর প্রারম্ভে জ্ঞান কোথা থেকে এসেছে ? কারণ জীবন শূন্য থেকে হয়েগেছে এটা মানা সম্ভব নয় ।’’ ডঃ সাহনি উত্তরে বলেন, ‘‘এর সাথে আমাদের কোনো সম্বন্ধ নেই যে জীব আর জ্ঞান কোথা থেকে এসেছে’’। আমরা এই বার্তা স্বীকার করে চলি যে প্রারম্ভে কিছু জীব ছিল আর কিছু জ্ঞানও ছিলো –

‘‘With this we are not concerned as to where from life came in the very beginning or wherefrom knowledge came in the very beginning. We are to take it for granted that there was some life in the beginning of the world and there was knowledge also in the beginning of the world and by slow progress it increased.”
এখানে ও বিকাশবাদের দুর্বলতা দেখা যায় ।

পরিশেষে আমি শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বের প্রবুদ্ধ মানব এবং বিজ্ঞানীদের অনুরোধ করতে চাই তাদের নিজের ইতিহাস নিয়ে গর্ব করতে শিখুন । আপনারা সবাই ইহা তো বিশ্বাস করেন এবং জানেন যে বেদ পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীনতম গ্রন্থ । বেদ যে ঈশ্বরীয় জ্ঞান তা প্রমাণ করার ক্ষমতাও আমাদের আছে তথা বেদ মন্ত্ররূপী ধ্বনি তরঙ্গ থেকেই মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে অর্থাৎ যে ধ্বনি তরঙ্গ থেকে মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে, সেই ধ্বনিগুলো বেদ মন্ত্রই ছিল এবং বর্তমানে সেই একই তরঙ্গ সর্বত্র বিদ্যমান । ইহা হলো আমার Vaidic Rashmi Theory of Universe, যা এই মহাবিশ্বকে বর্তমান ভৌতিকবিজ্ঞানের চেয়ে অনেক আগে পর্যন্ত বোঝাতে পারে । আমি এই প্রবন্ধে ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলির মাধ্যমে মানুষের উৎপত্তি নিয়েও আলোচনা করেছি । বেদ এবং ঋষিদের মতে, মানুষের প্রথম প্রজন্ম ছিল সবচেয়ে বুদ্ধিমান, শারীরিক ও মানসিক শক্তি এবং সত্ত্ব গুণের অধিকারী । তার পশ্চাৎ তাদের মধ্যে বরং শুধু ঘাটতিই হয়েছিল, বিকাশ নয়। আমরা সারা বিশ্বের সকল মানব সেই মহান পূর্বপুরুষদের বংশধর । বেদ আমাদের সকলের, ঋষিরা আমাদের সকলের পূর্বপুরুষ । বেদ ও ঋষিদের গ্রন্থের উপর শুধু মানুষ নয়, মহাবিশ্বের সমস্ত বুদ্ধিমান প্রাণীর অভিন্ন অধিকার রয়েছে।

আসুন, আমরা সবাই এই অভিন্ন ঐতিহ্যকে গ্রহণ করি, অধ্যয়ন এবং অনুসন্ধান করুন আর গর্ব করে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিদের বংশধর বলে ডাকুন । আমি শুধু জৈব-বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছি, জ্ঞান ও ভাষার কথিত ক্রমান্বয়ের বিকাশ নিয়ে একটি পৃথক নিবন্ধ বা বইয়ে সমালোচনা করা যেতে পারে । জৈব-বিকাশ নিয়ে এখানে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি, তা না হলে এই নিবন্ধটি একটি পুস্তিকা আকার ধারণ করত । বিজ্ঞা পাঠক, জ্ঞান এবং ভাষার বিকাশের সাথে সমগ্র মহাবিশ্বের বিস্ময়কর বিজ্ঞান জানতে ও বুঝতে বেদ বিজ্ঞান আলোক নামক আমার পুস্তক অধ্যয়ন করুন । হ্যাঁ, আমি আরও একটা কথা লিখতে উপযুক্ত মনে করি যে, যদি কোনো প্রবুদ্ধ এটা বলে যে যখন সূক্ষ্ম রশ্মি বিকাশ যাত্রা করতে করতে নানা কণা, ফোটন এবং নানা বিশ্বকে উৎপন্ন করতে পারে অথবা তাদের রূপে প্রকট হতে পারে, তাহলে অ্যামিবা থেকে মানবদেহে বিকাশকে মিথ্যা বলা হয় কেন ? এই বিষয়ে আমাদের নিবেদন যে জড় জগতের নির্মাণ বা বিকাশে, রশ্মি কণা বা ফোটন প্রায়শই তাদের স্বরূপকেও বজায় রাখে, কিন্তু কোনো বিকাশবাদী এটা মানবে না যে বিভিন্ন প্রাণীর দেহে অ্যামিবা তার স্বরূপে উপস্থিত রয়েছে । এই কারণে এই তুলনা ন্যায্য নয় ।
আমার বন্ধুরা! একটু বিবেচনা করুন যে, যে ব্যক্তি বা সমাজ নিজেকে পশুর বংশধর বলে, তাদের আত্মস্বাভিমান কোথায় থাকবে ? এই বিষয়ে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া এক বক্তৃতায় নাসার বিজ্ঞানী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ওপি পান্ডে ডারউইনের বিকাশকে প্রত্যাখ্যান করে ঠিকই বলেছেন যে, ‘সারা দেশে শিশুদের ভুল সিদ্ধান্ত শেখানো হচ্ছে, যা তাদের খারাপভাবে প্রভাবিত করছে’। (নবভারত টাইমস-২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮) আসুন, আমি আপনাদেরকে এই হীনমন্যতার গর্ত থেকে বের করে সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে চাই । আসুন, আমরা সবাই একই ঈশ্বরের পুত্র-কন্যা এবং এই পৃথিবী আমাদের আদি জন্মদাত্রী, এই কারণে পুরো পৃথিবীই হলো এক পরিবার । এই পরিবারটিকে সুখ, শক্তি ও আনন্দের দিকে নিয়ে যাওয়া আমাদের সকল মানুষের দায়িত্ব । আমাদের খোলা মন নিয়ে বিজ্ঞান অধ্যয়ন করার চেষ্টা করা উচিত । আমাদের পূর্বাগ্রহ (কুসংস্কার) পরিহার করে সত্য-অসত্যকে চেনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

লেখকঃ আচার্য অগ্নিব্রত নৈষ্ঠিক জী
বঙ্গানুবাদঃ আশীষ আর্য

প্রশ্নঃ সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমাত্মা কত জন মনুষ্য সৃষ্টি করেছিলেন??
উত্তরঃ অসংখ্য প্রজা সৃষ্টি করেছিলেন।। এ বিষয়ে উপনিষদ ও শতপথব্রাহ্মনের প্রমান অাছে।

সোহকাময়ত বহু স্যাং প্রজায়েয়েতি।
স তপোহতপ্যত। স তপস্তপ্ত্বা।
ইদং সর্বমসৃজত। যদিদং কিন্ঞ্চ। তৎ সৃষ্ট্বা।
তদেবানুপ্রাবিশৎ। ( তৈত্তি ২/৬)

পদার্থঃ (সঃ) সেই পরমাত্মা ( অকাময়ত) কামনা করিলেন ( বহু) অনেক প্রকার ( স্যাম্) হইব, ( প্রজায়েয়) উৎপন্ন হইব ( ইতি) এই কথা। ( সঃ) পরমাত্মা ( তপঃ তপ্ত্বা) সৃষ্টি বিষয়ক অালোচেনা করিয়া ( ইদম্) এই ( সর্বম) সমুদয় (যৎ ইদম্ কিম্ চ) এই যাহা কিছু অাছে তৎসমুদয়ই ( অসৃজত) সৃষ্টি করিলেন। ( তৎ) সেই সমস্ত ( সৃষ্ট্বা) সৃষ্টি করিয়া ( তৎ এব) সেই সকলের মধ্যে ( অনুপ্রাবিশৎ) অনুপ্রবেশ করিলেন। সরলার্থঃ সেই পরমাত্মা কামনায় বহু প্রজা( মনুষ্যাদি + অন্যান্যপ্রানী বর্গ) উৎপন্ন হইলেন। অামি উৎপন্ন করিব। তিনি সৃষ্টি বিজ্ঞান বিষয় ও কার্য কারন অবলম্বনে সব কিছু সৃষ্টি করিলেন এবং সৃষ্টির মধ্যে প্রবিষ্ট হইলেন। ২।।

অজামেকাং লোহিতশুক্লকৃষ্ণাং বহ্বীঃ প্রজাঃ সৃজমানাং সরূপাঃ।
অজো হ্যেকো জুষ মানো হনু শেতে জহাত্যেনাং ভুক্তভোগামজোহন্যঃ ( শ্বেতাশ্বর উ ৪/৫)

পদার্থঃ ( সঃ) পরমাত্মার ( রূপাঃ) সত্ব, তম,রজ প্রকৃতি ( বহ্বীঃ) অনেক ( প্রজাঃ) সন্তান বা মনুষ্যাদি + অন্যান্যা প্রানীসকল ( সৃজমানাম্) সৃজনকারিনী ( লোহিত শুক্ল কৃষ্ণাম্) রক্ত, শ্বেত ও কৃষ্ণাবর্ন বিশিষ্টা (একাম্) একমাত্র ( অজাম) জন্ম রহিত প্রকৃতিক ও পরমাত্মা ( একঃ হি) কোন ( অজঃ) জন্মরহিত অবিদ্যাগ্রস্থ জীব ( জুষমাণঃ) সেবা পরায়ন হইয়া ( অনুশেতে) ভোগ করে ( অন্যঃ) মুক্ত জীব ( ভুক্ত ভোগাম্) ভোগ করে বিরত হয়েছে ( এমাম্) এই প্রকৃতিকে ( জহাতি) ত্যাগ করে।

সরলার্থঃ প্রকৃতি,জীব এবং পরমাত্মা এই তিন অজ অর্থাৎ 'যাহার কখন ও জন্ম হয় না এবং ইহারা কখনও জন্ম গ্রহন করেন না। অর্থাৎ এই তিন সমগ্র জগতের কারন নাই। অনাদিজীব, এই অনাদি প্রকৃতিকে ভোগ করিতে অাবদ্ধ হয় কিন্তু পরমাত্মা ও মুক্ত পুরুষ তাহাতে অাবদ্ধ হন না এবং ভোগ করেন না। সেই পরমাত্মা বহু মনুষ্যাদি সৃজন করেছিলেন।।

মহর্ষি মনু প্রাণীর জন্মের তিন ধরনের প্রক্রিয়ার বিষয়ে বলেছেন-জরায়ুজ, অণ্ডজ এবং স্বেদজ

মনুস্মৃতি ১/৪৩,৪৪,৪৫

■গরু আদি পশু অহিংসক বৃত্তির বন্য পশু হরিণ আদি এবং দুই পাটি দাঁত যুক্ত হিংসক বৃত্তির পশু অর্থাৎ সিংহ, বাঘ আদি তথা রাক্ষস, পিশাচ তথা মনুষ্য আদি 'জরায়ুজ' অর্থাৎ ঝিল্লি হতে জন্ম হওয়া জীব।।

যার থেকে ধন সম্পত্তি রক্ষা করতে হয়, যে লুটপাট, চুরি, ব্যাভিচার আদি দুষ্ট কর্মে সক্রিয় থাকে তারাই রাক্ষস(নিরুক্ত ৪/১৮), যারা মাংস, রক্ত ভক্ষণ করে,হিংসক, দূরাচারী, অনাচারী তারা পিশাচ।

■পাখি, সাপ, কুমির, মাছ তথা কচ্ছপ এবং অন্যান্য যে যে জীব ভূমিতে বসবাস করে এবং
জলে বসবাস করে তারা 'অণ্ডজ' অর্থাৎ ডিম হতে উৎপন্ন হয়।।

■মাছি আদি উকুন মশা ছাড়পোকা আদি এই প্রকার যত জীব আছে তারা উষ্মা, গরম আদি হতে সৃষ্টি হয়, এই সমস্ত জীব 'স্বেদজ' অর্থাৎ ঘাম আদি হতে জন্ম হয়।

নানান পরিস্থিতি ওপর এমন জীবের জন্ম হয়, যেমন কোনো প্রাণীর মৃত দেহ কে দুইদিন ফেলে রাখুন দেখবেন সেখানে পোকার জন্ম হয়ে গেছে, পচা ফল আদি মধ্যেও সেই ভাবেই জীবের জন্ম হয়, বদ্ধ ঘরে মাকড়শার জন্ম হয়, এগুলো সবই স্বেদজ প্রাণীর মধ্যে পড়ে। উদ্ভিদ বাদে সকল জীবই এই তিন ভাগের মধ্যে একটি হতে জন্ম হয়।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ